এ.এম হোবাইব সজীব:
অবশেষে আইনী নানা জটিলতার কাটিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সমবায়ী প্রতিষ্ঠান কক্সবাজারের চকরিয়ার বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির বহুল প্রতিক্ষিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাত পোহালেই ৫ অক্টোবর বুধবার। সেই হিসেবে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে সোমবার মধ্যরাতে।
এবারের নির্বাচনে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সম্পাদক ও সদস্যসহ মোট ১২টি পদে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী রয়েছেন ৪৩ জন। তন্মধ্যে সভাপতি পদে ৩ জন, সহ-সভাপতি পদে ৩জন, সম্পাদক পদে ৩ জন ও সদস্য পদে ৩৪ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সভ্যদের (ভোটার) মন জয়ের লক্ষ্যে।
১৯২৯ সালে বদরখালী ঘোনা হিসাবে নামকরণ করা হয় বলে জনশ্রুতি আছে। উপকূলীয় এলাকায় হওয়ায় বন আবাদ করে ক্রমে বসতি গড়ে তোলা হয় বর্তমান সুপরিচিত বদরখালী।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করা সভাপতি ও সম্পাদক পদের একাধিক প্রার্থী কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। ইতিমধ্যে কোন কোন প্রার্থী সর্বনিন্ম ৩ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গোপনে সভ্যদের মাঝে বিলি করছেন জয়ের লক্ষে। তবে দেখা যাক আজকে বিজয়ের হাঁসিটা কে হাঁসবে!
সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও মাঠে দেখা যাচ্ছে না সমিতির সাবেক সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরীকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন সচেতন ভোটার বলেন, ‘ইকবাল বদরীকে নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এলাকার কিছু অপশক্তি চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক তিনি প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন। ওই অপশক্তি ইতিপূর্বেও তাকে (ইকবাল বদরী) হয়রাণিমূলক মামলায় জড়িয়ে দিয়েছেন। তাই প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে না পারলেও ঠিকই সচেতন ভোটারেরা তাকে এই পদে নির্বাচিত করে আজ দেখিয়ে দেবেন কোন অপশক্তির স্থান বদরখালীতে হবে না।’
এ ব্যাপারে বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুব-উল করিম আমাদের রামু কে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করা লক্ষে প্রশাসনের পক্ষে থেকে ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে’।
নির্বাচনী এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী (সোমবার) মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি চুড়ান্ত করা হয়েছে। নিয়োগ করা হয়েছে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদেরও। বদরখালী কলোনিজেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট ৯টি বুথে ভোট গ্রহন চলবে।’
মঙ্গলবার সরেজমিন নির্বাচনী মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনকেও হার মানিয়েছে বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির এই নির্বাচন। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই রঙিন নির্বাচনী পোষ্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, তোরণ নির্মাণসহ এমন কিছু বাদ নেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায়। এখন নির্বাচনীয় জ্বরে কাপছে পুরো বদরখালী। তবে সকলেই চায় সমিতিকে চাঙ্গা রাখতে যাকে প্রয়োজন তাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে। অত্র এলাকার জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কারা বসবেন মসনদে এখন এটাই দেখছেন ভোটার’রা।
মঙ্গলবার বিকালে চকরিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান ভোট কেন্দ্র এলাকা পরির্দশন করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে ১২টি পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন সর্বমোট ৪৩ জন প্রার্থী। এসব প্রার্থীর মধ্য থেকে ১২টি পদের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ১৫০০ ভোটার। সদস্য পদ ছাড়া সম্পাদকীয় পদে যারা নির্বাচন করছেন তারা হলেন সভাপতি পদে হাজি নুরুল আলম সিকদার (চেয়ার), মোহাম্মদ আলী চৌধুরী (হারিকেন), মৌলানা আবদুল মান্নান (দোয়াত কলম)। সহ-সভাপতি পদে আলী মোহাম্মদ কাজল (বাই সাইকেল), আলী আজম বাহাদুর (মই) ও ছালেহ আহমদ (কলসি)। সম্পাদক পদে সাবেক সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরী (আনারস), নুরুল আমিন জনি (চাকা) ও এম ওয়াইজ উদ্দিন (গোলাপ ফুল)।
এছাড়াও সদস্য পদে ৩৪ জনপ্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। বদরখালীর ৫০ হাজার মানুষ সমিতির ভাগ্যন্নোয়নের উপর নির্ভরশীল। নির্বাচনে সভাপতি পদে ৩ জন প্রার্থী থাকলেও মুল লড়াই হবে বর্তমান সভাপতি আলহাজ্ব নুরুল আমিন সিকদার (চেয়ার), মোঃ আলী চৌধুরী বি,এ (হারিকেল), তবে শেষ মুহুর্তে এসে প্রচারণাও জনপ্রিয়তায় মোঃ আলী চৌধুরী বি,এ হারিকেলের পক্ষে অনেকটা হৈ চৈ পড়ে গেছে। সহ-সভাপতি পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতা করলে ও মুল লড়াই হবে আলী মোঃ কাজল (বাই সাইকেল),আলী আজম বাহাদুর (মই)। সম্পাদক পদে ৩ জন হেভিয়েট প্রার্থী থাকায় সম্পাদক পদে ত্রি-মূখী লড়াই হবে বলে এলাকার ভোটারদের মাঝে আওয়াজ উঠেছে। তবে শেষ মুহুর্তে এসে সম্পাদক প্রার্থী ওয়াইজ উদ্দিন জয়ের লক্ষে ভোটারদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন।
সভাপতি প্রার্থী মোঃ আলী চৌধুরী বি,এ বলেন,শান্তির্পূণ ও সকলের ভোটারদের অংশ গ্রহনে নির্বাচন সফল হবে। এবং তিনি ইনশ্আল্লাহ শতভাগ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বলেও জানান। তিনি আরোও বলেন আমাকে একবার সভাপতি নির্বাচিত করুন সভ্য ও জনগণকে সাথে নিয়ে সমিতির অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করবো। সম্পাদক প্রার্থী নুরুল আমিন জনি বলেন, আমাকে যদি একবার সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় আমি বদরখালী চোখে পড়ার মত উন্নয়ন করব। এলাকার লোকজনের সুখে দুঃখে কাছে থাকব বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
সম্পাদক প্রার্থী ওয়াজই উদ্দিন বলেন, নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে আমার গোলাপ ফুল মার্কা আপনাদের মূল্যবান রায় দিয়ে আমাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করুন।