রামুতে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্যে ১০ টাকার আনন্দ হাট। নির্ধারিত ক্রেতারা এ হাটে প্রতিটি পণ্য ১ থেকে ১০ টাকায় বর্তমান বাজার মূল্যের ৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকার পণ্য কিনেছে। ক্রেতারা ১ টাকা দিয়ে এক কেজি চাল বা এক কেজি আটা কিনেছে। তেমনি ১ টাকায় এক কেজি সুজি বা দুই হালি ডিম অথবা এক কেজি ডাল, লাউ বা কুমড়া কিনেছে। ৩ টাকায় এক কেজি চিনি বা এক লিটার সয়াবিন তেল, শাড়ি বা থামি কিনেছে। ১ টাকায় মিলেছে নতুন পোষাক কেনারও সুযোগ। যেখানে ছিলো লুঙ্গি, থামি, শার্ট, টি শার্ট, ফ্রক, স্যান্ডেল সহ নানা পণ্য। সহজ মূল্যে পণ্য কিনতে পেরে উৎফুল্ল সুবিধাবঞ্চিত আড়াইশ বৌদ্ধ পরিবার। তালিকাভুক্ত প্রতি পরিবার সর্বোচ্চ দশ টাকার পণ্য কেনার সুযোগ পেয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। এ হাটে ছিলো ২৬ রকম পণ্য।
প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে রামু উপজেলার রাজারকুল রাংকুট বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন জগৎজ্যোতি চিলড্রেন ওয়েলফেয়ার হোম মাঠে সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্যে ব্যতিক্রমধর্মী এ হাটের আয়োজন করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় গরীবের সুপার শপ খ্যাত বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চ্যারিটি প্রজেক্ট ‘১০ টাকার আনন্দ হাট’ উদ্বোধন করেন, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এ এলাকায় এসে সেবার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। এ কার্যক্রমের ফলে এখানকার দরিদ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায় উৎসব-আমেজে প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করবে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। বিদ্যানন্দের মতো মানবিক সংগঠন সমূহ মানুষকে সহায়তার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৃষ্টির জন্যও কাজ করে যাচ্ছে। তাই আমাদের সবার উচিত এসব সংগঠনের পাশে থাকা।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার জামাল উদ্দিন জানান, আর ক’দিন পরেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা পালিত হবে। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্ন আয়ের মানুষ খুব দুর্দশার মধ্যে আছে। এর ছাপ পড়েছে এখানকার সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোতে। তাদের উৎসবকে রাঙিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ‘১০ টাকার আনন্দ হাট’ আয়োজন করেছে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ মোবারক বাবু জানান, আয়োজনটি রামুর রাজারকুলে হলেও দূরের এলাকা থেকে দুঃস্থ পরিবারগুলো এসে কেনাকাটা করার সুযোগ পেয়েছে। এজন্য যাতায়াত সুবিধা দিতে বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে বিশেষ যাতায়াত সার্ভিস চালু করায় কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী রাখাইন পল্লী, রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের পানেরছড়া রাখাইন পল্লীর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ও এখানে কেনাকাটার সুযোগ পেয়েছে।
তাঁরা আরও জানান, বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবীরা ঘরে ঘরে জরিপ করে টোকেন প্রদান করেন। যা দেখিয়ে এ সুপার শপে পণ্য কেনার সুবিধা দেয়া হয়েছে। মূলত পণ্য বাছাই করার স্বাধীনতা দেয়ার পাশাপাশি দরিদ্র মানুষকে উৎসবের কেনাকাটার অভিজ্ঞতা দিতে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এমন উদ্যোগ নিয়েছে। কেবল প্রবারনা পূর্ণিমা নয়, মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব ঈদ এবং চলমান দূর্গা পূজা উপলক্ষ্যেও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নানা কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
‘১০ টাকার আনন্দ হাট’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, রামকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রী জ্যোতিসেন মহাথের , রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো, রামু উপজেলা যুবলীগ সভাপতি পলক বড়ুয়া আপ্পু, রাম প্রেসক্লাব সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক সোয়েব সাঈদ, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার জামাল উদ্দিন।
রামু প্রেসক্লাব সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া বলেন, বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। এই আনন্দ হাটের কারণে সুবিধাবঞ্চিত অনেক অসহায় মানুষ বাজার করে উপকৃত হবে।