যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুধু সে দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়। পুরো বিশ্বই এ নির্বাচন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। মঙ্গলবার ভোটের লড়াই হবে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচনের প্রভাব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সারা বিশ্বেই অনুভূত হয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন সারা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বর্তমান বিশ্বে একক পরাশক্তি হিসেবে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্ভাব্য শক্তি হিসেবে রাশিয়া বা চীনের দাপট আছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো ক্ষমতা তারা এখনও অর্জন করতে পারেনি।’ যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনও ধরনের নীতি সারা বিশ্বের ওপর প্রভাব ফেলে। সে কারণে সারা বিশ্ব এ নির্বাচনকে গভীর মনোযোগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে।’
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি জয়ী হলে যুক্তরাষ্ট্রে আগের নীতি মোটামুটি বজায় থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প জয়ী হলে মার্কিন নীতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। প্রেসিডেন্টের পছন্দ ও অপছন্দের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনেকাংশে নির্ভর করে।’
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচনে যে-ই জয়লাভ করুক আমরা আশা করি দুই দেশের সম্পর্ক আরও বেশি জোরদার ও বেগবান হবে। যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনও নীতির পরিবর্তন অনিশ্চিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে এবং বাংলাদেশ তাতে স্বস্তি বোধ করবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘হিলারি ক্লিনটন বারবার বলেছেন তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নীতি অনুসরণ করবেন। আমরা আশা করতে পারি, ডেমোক্র্যাটরা জয়য় হলে তেমন পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই। অপরপক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হলে তার ঘোষণা অনুযায়ী বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।’
বাণিজ্য, অভিবাসন, নিরাপত্তা ও অন্যান্য নীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্প বড় পরিবর্তন আনতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসরণ করে কিন্তু ট্রাম্প বলেছেন, তিনি মুক্তবাজার ব্যবস্থায় রক্ষণশীল নীতি অনুসরণ করবেন। যদি মুক্তবাজার অর্থনীতির ক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন আসে তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত জানান, পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার এবং সেখানে বাংলাদেশ প্রতিবছর ৬০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রফতানি করে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি অবস্থান করছে এবং প্রতিবছর অনেক বাংলাদেশি পড়াশোনা বা অন্য কাজে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। ট্রাম্প মুখে যা বলেন সেটি যদি কাজে পরিণত করেন তবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বাংলাদেশি এবং গমনেচ্ছু বাংলাদেশিদের বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।
নিরাপত্তা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প বলেছেন তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করবেন এবং সেটি করা হলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এ অনিশ্চিত পরিস্থিতি বা শুন্যতা বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলোর জন্য ভালো হবে না।’
তবে মার্কিন জনগণ যাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত করবে তার সঙ্গেই বাংলাদেশকে কাজ করতে হবে এবং অপরিবর্তিত বা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ বজায় রেখে দ্বিপক্ষীয় কূটনীতি অব্যাহত রাখতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।