স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া
আমাদের রামু ডটকম:
জমে উঠেছে কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচন। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা। ভোটারদের ফুল দিয়ে ব্যতিক্রম প্রচারণা চালাচ্ছে আওয়ামীলীগের মেয়রপ্রার্থীর সমর্থকেরা।
তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। গতকাল শনিবার প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েই পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। খুব জোরেশোরে প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামীলীগের কর্মী-সমর্থকেরা ভোটারদের কাছে পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন।
মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম হায়দার ছাড়া আর কোন প্রার্থী নেই।
আলমগীর চৌধুরী উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও নুরুল ইসলাম হায়দার পৌরসভা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ দিনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী জসিম উদ্দিন কৃষি ব্যাংকের দুই লাখ ৫৪ হাজার টাকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারুল হাকিম প্রাইম ব্যাংক চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড় শাখার এক লাখ ৯০ হাজার টাকার ঋণ খেলাপী হওয়ায় তাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষনা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মেছবাহ উদ্দিন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মেছবাহ উদ্দিন বলেন, চার প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায় এখন নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন নৌকার প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী ও ধানের শীষের প্রার্থী নুরুল ইসলাম হায়দার।
২০ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় দফার পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে শুধুমাত্র তাঁরা দুইজনেই লড়াই করবেন।’ তিনি বলেন, মেয়র পদে দুইজন ছাড়াও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২০ জন ও নয়টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৫০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘১৮ টি ভোট কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৪২ হাজার ৩০৬ জন। এর মধ্যে ২২ হাজার ২৬৫ জন পুরুষ ও ২০ হাজার ৪১ জন নারী ভোটার রয়েছেন।’
জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি চকরিয়া পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ১১ হাজার ২২৭ ভোট পেয়ে চকরিয়া পৌরসভা বিএনপির সভাপতি নুরুল ইসলাম হায়দার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি বর্তমান চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম পেয়েছিলেন নয় হাজার ৫০৯ ভোট।
প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচনী আমেজে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামীলীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা নৌকা ও ধানের শীষে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে চকরিয়া-পেকুয়া আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ ইলিয়াছ বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন। এ কারণে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা উন্মুখ হয়ে আছে তাঁদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য।
চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার ভোটার কাউছার উদ্দিন কছির বলেন, ‘গত পাঁচবছরে ছয়মাসও বর্তমান মেয়র পৌরসভায় যাননি। ঘরে বসে পৌরসভা চালিয়েছেন। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও অধিকাংশ এলাকার রাস্তা-ঘাটে সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়নি। পৌরসভার মানুষ ঠিক সময়ে কর পরিশোধ করলেও একটা সড়কও চলাচলের উপযোগী নয়। জনগণ ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে এ সব বিষয় অবশ্যই বিবেচনা করবে।’
অন্যদিকে চকরিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌরসভার ভোটার সাহাব উদ্দিন লাল্টু বলেন, ‘গত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর চেয়ে দেড় হাজারের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। সরকারের নেতিবাচক কর্মকান্ডের কারণে বর্তমানে বিএনপির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কর্মী-সমর্থকেরাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে। এ কারণে বিএনপির প্রার্থী সহজেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারবেন।’
তবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির সহযোগি সংগঠনের তরুণ নেতাদের দৃষ্ঠিভঙ্গির বাইরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সাধারণ ভোটারেরা।
জালিয়াপাড়ার ভোটার আবদুল কাদের (৪৫) বলেন, ‘প্রতীক দেখে নয়, এবার ভোট দিবো লোক দেখে। প্রতীক দেখে ভোট দিলে পৌরসভায় কোনো উন্নয়নই হবে না। যোগ্য প্রার্থীও নির্বাচিত হবেন না।’
বাটাখালীর ভোটার মো. কাইয়ুম রেজা বলেন, ‘যে প্রার্থী জনগণের জন্য নিরাপদ, যাকে নির্বাচিত করলে পৌরসভার উন্নয়নে গতিশীলতা আসবে তাকেই ভোট দিবো।’
বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার বলেন, ‘আমি গত পাঁচবছর পৌরসভার দায়িত্ব পালন করেছি। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের প্রতি জনগণের আস্থা রয়েছে। তাছাড়া ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্ঠি হয়েছে। দীর্ঘদিন পর বিএনপির কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষ ধানের শীষে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তারা অবশ্যই সুযোগটি কাজে লাগাবেন।’
আওয়ামীলীগের মেয়রপ্রার্থী আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের কাছে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এবার তাঁরা পরিবর্তন চাচ্ছেন। আনকোড়া কাউকে আর মেয়রপদে বসাবে না জনগন। গত পাঁচবছরে পৌরসভার মানুষ কাঙ্খিত নাগরিক সুবিধা যেমন পায়নি, তেমনি উন্নয়ন ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ কারণে তাঁরা আমাকেই পৌরপিতা নির্বাচন করবেন।’
জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি চকরিয়া পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ১১ হাজার ২২৭ ভোট পেয়ে চকরিয়া পৌরসভা বিএনপির সভাপতি নুরুল ইসলাম হায়দার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি বর্তমান চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম পেয়েছিলেন নয় হাজার ৫০৯ ভোট।
এ পৌরসভায় বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৪২ হাজার ৩০৬ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ২০ হাজার ৪১ জন আর পুরুষ ভোটার ২২ হাজার ২৬৫ জন।
নয় ওয়ার্ডের ১৮ টি কেন্দ্রে ১২২টি বুথে ভোট প্রয়োগ করবেন পৌরবাসী।