নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া।
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বাঘগুজারা রাবার ড্যাম আবারও খুলে যাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অন্তত ৬০ হাজার বোরো চাষি।
গত বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে জোয়ারের তোড়ে রাবার ড্যামের একটি অংশের জোড়া খুলে যায়। এর ফলে নদীর উজানে লোনা পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
এর আগে ২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর, ২০১৫ সালের ২১ মার্চ ও ২০ এপ্রিল তিন দফায় রাবারের জোড়া খুলে পড়ে। বারবার রাবার ড্যামের জোড়া খুলে পড়ায় তদন্ত কমিটি করার দাবি উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা রাবার ড্যামের দক্ষিণ অংশের (বাঘগুজারা) রাবারের জয়েন্ট (জোড়া) খুলে গেছে। ড্যামের ওপর দিয়ে সাগরের দিক থেকে উজানে জোয়ারের লোনা পানি ঢুকছে। রাবার ড্যামের চারটি অংশের মধ্যে অন্য তিনটি অংশের জোড়াতেও ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোন মুর্হুতে তাও খুলে যেতে পারে।
বাঘগুজারা রাবার ড্যামের অপারেটর আব্দুর রহিম (৩০) আমাদের রামুকে বলেন, ‘রাবার ড্যাম ফুলানো ছিল। বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে জোয়ারের তোড়ে ড্যামের একটি অংশের জোড়া খুলে যায়। নির্মানের পর থেকে এ পর্যন্ত চারবার ড্যামের জোড়া খুলে গেছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মাতামুহুরী নদীর মিঠা পানি আটকিয়ে বোরো আবাদ করতে গত ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা পয়েন্টে ২৩৩ দশমিক ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে রাবার ড্যামটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৩১ কোটি চার লাখ টাকা ব্যয়ে ড্যামটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১২-১৩ অর্থবছরে।
২০১৩ সালের ১১ মে তৎকালিন পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন ড্যামটির উদ্বোধন করেন। ড্যামটি নির্মানের ফলে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অন্তত ৩৫ হাজার একর জমির ৬০ হাজার চাষি সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে।
তবে বারবার ড্যামের জোড়া খুলে যাওয়ায় রাবার ড্যাম নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে স্থানীয় চাষিরা। বাঘগুজারা এলাকার কৃষক মো. হাসান আলী (৪৫) আমাদের রামুকে বলেন, ‘রাবার ড্যাম নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। রাবারের জোড়ায় ভালোভাবে আঁটা (গাম) লাগানো হয়নি। ড্যামের পিলার ঢালাইয়ের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। ফায়ার ফিনিশিংও ভালোভাবে করা হয়নি। নির্মাণের সময় স্থানীয় লোকজন বাঁধা দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তা শুনেননি।
এখন অন্তত তদন্ত কমিটি করে কেন বারবার ড্যামের রাবার ছিঁড়ে যাচ্ছে তা বের করা হোক।’
বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাঁদার কৃষক মো. রুবেল বলেন, ‘মিঠা পানির সুবিধা নিয়ে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এখন ড্যামের রাবার খুলে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। দ্রুত ড্যাম মেরামত করা না হলে মিঠা পানির অভাবে চাষাবাদ হবে না। এ ছাড়া বেগুন, টমেটো, মরিচ, আঁখের চাষ হয়েছে। মিঠা পানি না পেলে কৃষকেরা মাঠেই মারা যাবে।’
চকরিয়া উপজেলা উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান আমাদের রামুকে বলেন, ‘চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী, পূর্ব বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, বরইতলী, কৈয়ারবিল এবং পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া, পেকুয়া সদর, শিলখালী ইউনিয়নের বোরো চাষ সম্পূর্ণ এই রাবার ড্যামের ওপর নির্ভরশীল।’
ড্যামের রাবার খুলে যাওয়ার খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
জানতে চাইলে পাউবোর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান আমাদের রামুকে বলেন, ‘আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে মেরামত কাজ সম্পন্ন করা হবে। রাবার ড্যামে বিদেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যেটি এখানকার পলির সঙ্গে ঠিকছে না। তারপরও কেন বারবার রাবার খুলে যাচ্ছে, তা তদন্ত করে দেখা হবে।’