ক্রীড়া ডেস্ক:
শততম টেস্টে অবিস্মরণীয় জয় পেল বাংলাদেশ। কলম্বোর পি সারা ওভালে ঐতিহাসিক ম্যাচটি ৪ উইকেটে জিতল মুশফিক বাহিনী। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে বাংলাদেশ পেল দুর্লভ জয়ের মর্যাদা। শততম টেস্ট জয়ের কৃতিত্ব যে নেই ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলোরও। এ জয়ে ‘জয় বাংলা কাপ’ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ভাগাভাগি করে নিল। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হলো ১-১ এ ড্র।
১৯১ রানের লক্ষ্যে নেমে শুরুতে রঙ্গনা হেরাথের স্পিনে কাবু হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমানের শতাধিক রানের জুটিতে জয়ের পথটা মসৃণ হয় তাদের। বাংলাদেশের জয়ে তুলির শেষ আঁচড় দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫৮তম ওভারের পঞ্চম বলে প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে সুইপ করে দুটি রান নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নেন তিনি।
একই ওভারে লক্ষ্য থেকে ২ রান দূরে থাকতে মোসাদ্দেক ধরা পড়েন নিরোশান ডিকবেলার গ্লাভসে। প্রথম ইনিংসের হাফসেঞ্চুরিয়ানকে থামতে হয় ১৩ রানে। বাংলাদেশের জয়ের মুহূর্তে মাঠে ছিলেন মুশফিক। ৪৫ বলে ২২ রান করে ইতিহাসের সাক্ষী হন অধিনায়ক।
প্রত্যাশিত জয়ের লক্ষ্যে ছুটতে গিয়ে হেরাথের স্পিনে শুরুতে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। লঙ্কান অধিনায়কের ওভারে পরপর দুই উইকেট হারায় তারা।
এর আগে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের অষ্টম ওভারে বড় ধাক্কা দেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক। তামিমের সঙ্গে ভালো জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন সৌম্য। কিন্তু অষ্টম ওভার পর্যন্ত স্থায়ী হয় তাদের জুটি। নিজের চতুর্থ ওভারে হেরাথ ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। লঙ্কান অধিনায়কের শর্ট বলে সৌম্যর আগ্রাসী শট লং অফে দৌড়ে এসে মুঠোবন্দি করেন উপুল থারাঙ্গা। গলেতে ৭১ ও ৫৩ এবং কলম্বোয় প্রথম ইনিংসে ৬১ রানের ইনিংস খেলা সৌম্য থামেন ১০ রানে। মাত্র ২৬ বল ক্রিজে মোকাবিলা করেছেন এ ওপেনার।
এক উইকেট হারানোর ব্যথা ভোলারও সময় পায়নি বাংলাদেশ। হেরাথের অফসাইডে আসা বলটি ইমরুল কায়েস তুলে দেন স্লিপে দাঁড়ানো আসেলা গুনারত্নের হাতে। প্রথম ইনিংসে ৩৪ রান করা ইমরুল এবার রানের খাতা খুলতে পারেননি।
সেই চাপ থেকে দলকে বের করে আনেন তামিম-সাব্বির। ২২ রানে দু্ই উইকেট হারানোর পর তামিম ও সাব্বিরের ১০৯ রানের জুটিতে ঐতিহাসিক জয় পায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের ১ রানের জন্য হাফসেঞ্চুরি হয়নি তামিমের। দ্বিতীয় ইনিংসে তাই সাবধানী ব্যাটিং করেছেন তিনি। যার ফলে পেয়েছেন ক্যারিয়ারের ২২তম ফিফটি। ৮৭ বলে পঞ্চাশ ছোঁন তিনি। কিন্তু ব্যক্তিগত ৮২ রানে দিলরুয়ান পেরেরাকে বেশ উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে দিনেশ চান্ডিমালের ক্যাচ হন তামিম।
৫ ওভার যেতেই দলের চতুর্থ উইকেটের পতন। দিলরুয়ান পেরেরার বলে সাব্বির ৪১ রানে আউট হন এলবিডব্লিউ হয়ে। আম্পায়ার শুরুতে আউট না দিলেও রিভিউয়ে সফল হয় শ্রীলঙ্কা।
প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান সাকিব আল হাসান বেশিদূর যেতে পারেননি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হতে হয়েছে তাকে। চা বিরতির পর তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে পেরেরার বল সাকিবের অফস্ট্যাম্পে আলতো ছোঁয়া দেয়। খালি চোখে সেটা টের পায়নি কেউ। কয়েক মুহূর্ত পর পড়ে যায় বেইল। লঙ্কান উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকবেলা বেইল পড়া দেখে আবেদন করেন। রিভিউয়ে দেখা যায় ডিকবেলার প্যাড নয়, বেইল পড়েছে স্ট্যাম্পে বল লেগে। মাত্র ১৫ রানে আউট হন সাকিব।
মাঝে দুইবার বিপদের শঙ্কায় পড়েছিল বাংলাদেশ। ৩ রানে হেরাথের হাতে ফিরতি শটে জীবন পান মোসাদ্দেক। আগের ওভারে ১১ রানে আম্পায়ারের এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্তের বিপরীতে রিভিউ নিয়ে সফল হন মুশফিক।
এর আগে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেটে ২৬৮ রানে। পঞ্চম দিন রবিবার সকালে প্রথম ঘণ্টা তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। অবশেষে সেই শক্ত জুটির সমাপ্তি হয় বাংলাদেশের মিস ফিল্ডিংয়ে। শুভাশীষের হাত গলে বল বের হলে রান নিতে চেয়েছিলেন পেরেরা। কিন্তু শুভাশীষের থ্রোতে মিরাজ নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে পেরেরার পৌঁছানোর আগেই স্টাম্পে লাগান। রান আউটে বিদায় নিতে হয় পেরেরাকে। এর আগে ১৭৪ বলে ৫০ রান করেন তিনি।
এ আউটে ভাঙে ২১.২ ওভারে গড়া ৮০ রানের শক্ত জুটি। পরের ওভারে সাকিবকে মারতে গিয়ে লং অফে মোসাদ্দেক হোসেনের ক্যাচ হন লাকমল। ৪২ রানে তিনি আউট হলে শেষ হয় শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংস। ১১৩.২ ওভারে ৩১৯ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
সূত্র: বাংলাট্রিবিউন।