এম.এ আজিজ রাসেল:
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা। এ উপলক্ষে ১০ মে বুধবার বিকালে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকা ঘুরে কেন্দ্রীয় মাহাসিংদোগ্রী প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। অপর আরেকটি শোভাযাত্রা কক্সবাজার অগ্গমেধা ক্যাং থেকে শুরু হয়ে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অগ্গমেধা, বড় ক্যাং, পিটাকেট, চেন্দামেজু, জিদারাম ও মোহাজেরপাড়া বিহার ঘুরে দেখা যায়, ধর্মপ্রাণ মানুষের ভীড়। সেখানে একে অপরের সাথে কৌশল বিনিময় করেন। বুদ্ধত্ব লাভের প্রতীক বোধিবৃক্ষের গোড়ায় চন্দনের পানি ঢেলে ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে বিশেষ প্রার্থনা করতে দেখা যায়। এসময় বিহার প্রাঙ্গণ মিলনমেলায় পরিণত হয়। সকালে গ্রহণ করেন পবিত্র অষ্টশীল। ধর্মীয় গুরুরা বুদ্ধ পূর্ণিমার গুরুত্বারোপ করে বিশদ আলোকপাত করেন। প্রবীণ-নবীন অনেকেই উপবাস পালন করে বলে জানা যায়।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের সহকারী পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, গৌতম বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন ৮০ বছর বয়সে। আজ থেকে ২৫৬০ বছর পূর্বে গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে। খ্রিস্টের জন্মের ৬২৩ বছর আগে সিদ্ধার্থের (পরবর্তী সময়ে গৌতম বুদ্ধ) জন্ম হয়। তিনি ৩৫ বছর বয়সে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৮ অব্দে বুদ্ধত্ব জ্ঞান বা বোধিজ্ঞান লাভ করেন। আর মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন (৬২৩-৮০) খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে। বুদ্ধপূর্ণিমা বিশ্ব বৌদ্ধদের বৃহত্তম ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব। ইদানীং বিশ্বব্যাপী ঘটা করে বুদ্ধপূর্ণিমা পালিত হতে দেখা যায়। জাতিসংঘের সদর দফতরে বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপন করা হয়েছে। সিদ্ধার্থের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ এবং বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ লাভের মতো মহান ত্রি-স্মৃতিবিজড়িত শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা এখন সর্বজনীন উৎসব।জগৎ অনাচার, পাপাচারে নিমজ্জিত হলে জগতের কল্যাণে এবং মানুষকে জীবনের সঠিক পথ দেখাতে জীবের দুঃখমোচনে সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে। ভারতবর্ষে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ জাত-পাতের চরম বৈষম্য, ধর্মের নামে প্রাণযজ্ঞ আর হিংসায় মানুষ যখন মেতে উঠল, মানুষকে আলোর পথ দেখাতে বুদ্ধ ধরায় এসেছিলেন। তিনি মানুষকে কেবল মানুষ হিসেবে দেখেছিলেন। তাঁর সাধনা ও সুখ কামনা ছিল সব প্রাণীর জন্য। শুভ বুদ্ধপূর্ণিমার আলোয় ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’।
কক্সবাজার রাখাইন ফ্রি স্টাইল রিলেশন গ্রুপের বাওয়ান, মং হ্লা ওয়ান, মংথেন নাই, সো সো, থেন থেন নাই, মংবাশেন, উখিনজ্য, বাবুশে, বাংলাদেশ রাখাইন স্টুডেন্ট কাউন্সিলের জ জ, জ জ ইয়ুদি, হাপু, মংসিয়ে, আক্য, আবুরী, ওয়া ওয়া উ, ওয়ান ওয়ান, চ লাইন, হ্যাংগিং গার্ডেনের ওয়ানশে, ববি, নাই নাই, কিংজ ও জওয়ান এবং রাখাইন তরুণ প্রজন্ম ঐক্য পরিষদের জহিন, অভি, চনাই শে, মং মং, চলা জানান, বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দিন গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম, বোধিজ্ঞান ও মহাপরিনির্বাণ লাভ এই ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে এটি বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত। আড়াই হাজার বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম দেয়া হয় ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’। আমরা বিশ্ব শান্তি কামনায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনসহ সমবেত প্রার্থনা শেষে বর্ণাঢ্য কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন করেছি।
এদিকে শহরছাড়াও জেলার রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ায় যথাযথ ভাবে উপযাপন করা হয়েছে গৌতম বুদ্ধের জন্মোৎসব।