সুনীল বড়ুয়া:
প্রত্যয় ও পূর্ণতা। ওরা যমজ ভাই-বোন। একই ক্লাসে পড়ে। দু’জনেরই বয়স মাত্র সাড়ে সাত বছর। ফুটফুটে,হাসিমাখা চেহারা। দুজনই ছোট্ট শিশু। পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে বেশি কিছু বোঝার কথা নয়। কিন্তু কয়েকমাস ধরে অসুস্থতা এবং বাবা-মায়ের আচরণ,কথাবার্তা শুনে পূর্ণতা ঠিকই বুঝে ফেলেছে,তার ভাইটি বেশ অসুস্থ। ওকে (প্রত্যয়) মরণব্যাধি রোগ গ্রাস করেছে। কিন্তু পূর্ণতা হয়তো ভাবছে,প্রতিদিন যার সাথে সে স্কুলে যায়, খেলা করে ? সেই ভাইটির যদি কিছু হয়,তাহলে সে কার সাথে খেলা করবে,কার সাথে স্কুলে যাবে ?। এ ধরনের এক অজানা শূণ্যতা কাজ করছে নিষ্পাপ পূর্ণতার মনে। কিন্তু পূর্ণতা ভাবছে, দেশের প্রধানমন্ত্রী চাইলেই তার ভাইটিকে বাঁচাতে পারেন। সেই মনের জোরে পূর্ণতা নিজের হাতে একটি চিঠিও লিখে ফেললো প্রধানমন্ত্রীর।
চিঠির হুবহু লেখা এ রকম- ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,আমি পূর্ণতা রায়। আমার ভাই প্রত্যয় রায়। আমি এবং আমার ভাই দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি। আমার ভাইয়ের কঠিন অসুখ। তাকে বাঁচাতে সাহার্য্য করুন।-আপনার আদরের পূর্ণতা রায়। বেগমগঞ্চ জে কে মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,কুরিপাড়া বেগমগঞ্চ,নোয়াখালী ’।
প্রিয় পাঠক, ছোট্ট অবুছ শিশুটি এর চেয়ে বেশি আর কি বা লিখতে পারে। ওর লেখায় এর চেয়ে বেশী কিছু না থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভাইয়ের প্রতি বোনের অসাধারণ মমত্ববোধ,ভালোবাসার তাগিদ এসব কিছু তো বার বার আমাদের হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়,নাড়া দেয়। আমরা কি চাইলে এড়িয়ে যেতে পারি। তবে এটা ঠিক এবং পূর্ণতাও হয়তো জানে না , ওর ‘চিঠি’ দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছা কতটা কঠিন। আসুননা, আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে চেয়ে না থেকে নিজেরা কিছু একটা করি।
ওদের পরিবার সুত্রে জানা গেছে, প্রত্যয় ও পূর্ণতার বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় । তাদের বাবা প্রহ্লাদ রায় ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মা সঞ্চিতা রায় গৃহিনী। চার ছেলে মেয়ের মধ্যে সবার ছোট প্রত্যয় ও পূর্ণতা। বড় ছেলে প্রান্ত রায় এবার এসএসসি পাশ করেছে। মেঝ ছেলে প্রতীক জেএসসি পরীক্ষা দেবে। অভাবের সংসার।
গৃহকর্তা প্রহ্লাদ এক সময় ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর ছোট্ট একটি দোকান করতো। কিন্তু হ্রদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাকে ওপেন হার্ট সার্জারী করাতে হয়। চিকিৎসা খরচ মেঠাতে গিয়ে দোকানসহ সহায় সম্বল যা ছিল সবই গেছে। এখন নিঃস্ব।
অভাবের কারণে টানা পোড়নের সংসারে ২-৩ মাস আগে প্রত্যয়ের ধরা পড়ে বোন ক্যান্সার। এরপর থেকে প্রত্যয়ের বাম হাতের বাহুর উপরে ফুলে যাচ্ছে। যন্ত্রনা করছে। ওর চেহারার দিকে তাকালে মনটা ঠিক থাকেনা,সবকিছু ওলট পালট মনে হয়। চোখের সামনে এ রকম একটি সন্তান চলে যাবে তা কি মেয়ে নেওয়া যায় ?
তিনি আরো বললেন, পরিবারে সহায় সম্বল যা ছিল,সবই তার স্বামীর চিকিৎসা খরচে চলে গেছে। উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন সেই দোকানটিও বেচে দিতে হয়েছে। এখন একদম আয় রোজগার নেই। অভাবের কারণে পরিবারে খুব টানা পোড়ন। এর মধ্যেও প্রত্যয়ের ক্যান্সার। এ অবস্থায়ও ধার-দেনা করে ওর জন্য দেশে প্রায় একলাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। পরে আমার এবং আমার স্বামীর ভাই বোন আত্মীয় স্বজনের সহযোগিতায় আরো প্রায় দেড় লাখ টাকা জোগাড় করে প্রত্যয়কে চিকিৎসার জন্য ভারতের ভ্যালুরের খ্রীস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. নরেন্দ্র কুমার চৌধুরীকে দেখানো হয়। কিন্তু টাকার অভাবে হাসপাতালে ভর্তি করানো যাচ্ছেনা। ডাক্তার জানিয়েছেন, ক্যান্সার এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে কিন্তু সুস্থ হতে দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা দরকার। আবার দ্রুত সঠিক চিকিৎসা শুরু করা না গেলে ক্যান্সার ছড়িয়ে যাবে এবং জটিল আকার ধারন করবে। কমপক্ষে একবছর চিকিৎসার পর অপারেশন করা যাবে। এতে খরচ লাগবে প্রায় ১২ লাখ টাকা। হাসপাতালে ভর্তির জন্য অগ্রীম দিতে হবে অর্ধেক টাকা।
সঞ্চিতা বলেন, এ অবস্থায় টাকার অভাবে ভারতের একটি হোটেলে প্রত্যয়কে নিয়ে দিন পার করছেন ওর বাবা। দেশে টাকা যোগাড় হলে, ভারতে পাঠানো হবে, ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করাবে, চিকিৎসা শুরু হবে, এই অনিশ্চিত এক স্বপ্নের বাস্তবায়নের দিন গুনছেন তিনি। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে ১২ লাখ টাকা যোগাড় করা আমাদের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়। ‘দেশে এতো ধনী,ধনী মানুষ আছেন,তাদেরও তো এ রকম ছেলে মেয়ে আছে। তারা কি আমার ছেলেটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে পারেননা’। হতভাগ্য মা সঞ্চিতার এই আবেদন দেশবাসীর কাছে।
অন্যদিকে খেলার সাথী ভাইটিকে হারানোর ভয় ভর করেছে পূর্ণতার মনে। তাইতো মায়ের সাথে কথা বলতে গিয়ে মুঠোফোন কেড়ে নিয়েই এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলে পূর্ণতা। ফোন নিয়েই পূর্ণতা’ বলে-‘আংকেল… নমষ্কার। আমি পূর্ণতা। আমি প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছি, আপনি একটা ফোন করেন না। আমার ভাইকে সুস্থ করে দিতে বলেন না…’।
পাঠক,আপনি একবার ভাবুন তো, এই পূর্ণতা-প্রত্যয় যদি আপনার সন্তান,আপনার ভাই-বোন,আপনার নিকটাত্মীয় হতো ? তখন আপনার অনুভুতি কেমন হতো ?। করণীয় কি হতো আপনার ? প্রত্যয়কে সুস্থ করে তুলতে দরকার ১২ লাখ টাকা। ১৬ কোটি মানুষের কাছে ১২ লাখ টাকা কি খুব বেশী কিছু ? এ রকম অনেব বড় বড় দৃষ্টান্তের কথা আমরা জানি। আমরা জানি এদেশে মহৎপ্রাণ মানুষের সংখ্যাও নিতান্তই কম নয়। আসুননা, নিষ্পাপ শিশুটিকে বাঁচাতে আমরা আবার মানবিক হই,। অন্তত পূর্ণতার খেলারসাথীকে বাঁচাতে প্রত্যয়ের পাশে দাঁড়াই । আমরা পুণর্বার প্রমান করি ‘মানুষ মানুষের জন্য,জীবন জীবনের জন্য’।
সাহার্য্য পাঠানো যাবে- সঞ্চিতা রায়, রূপালী ব্যাংক,সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর-৫৭০২,চৌমুহনী শাখা,বেগমগঞ্জ নোয়াখালী। মোবাইল-০১৭৮৬৩২৩৪৯২,০১৮১৮৩২১৯৩৪।