সোয়েব সাঈদ, রামু।
রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়িতে অবস্থিত হোপ ফাউন্ডেশনের পরিচালনাধীন মা ও শিশু হাসপাতালের বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন ফিস্টুলা আক্রান্ত নারীরা। মায়েদের বাধাগ্রস্ত এবং বিলম্বিত প্রসবের ক্ষেত্রে এই রোগের সৃষ্টি হয়। এ রোগের ফলে মায়েদের অনবরত প্রস্রাব ঝরতে থাকে যা তার জীবনে অভিশাপ হয়ে দেখা দেয়। স্বামী এবং সংসার থেকে বিচ্যুত হয়। সমাজ ও তাকে মেনে নেয় না। এই জটিল এবং ব্যয় বহুল রোগের চিকিৎসা হোপ হসপিটালে নিয়মিত হচ্ছে।
এই হাসপাতালে ফিস্টুলা রোগীর সার্জারীর জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার এবং স্টাফ রয়েছে।
২০১১ সাল থেকে এই হাসপাতালে ফিস্টুলা রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে এবং এই পর্যন্ত প্রায় ২৫০ জন ফিস্টুলা রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পুর্ণ সুস্থ হয়েছেন এবং সুস্থ জীবন যাপন করছেন।
উল্লেখ্য, এই জটিল এবং ব্যয়বহুল অপারেশনটি হোপ হসপিটালে সম্পুর্ণ বিনা খরচে করা হয়। এ ছাড়াও ঠোঁট কাটা ও তালু ফাটা এবং আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা ও বিনা খরচে করা হয়ে থাকে। অন্যান্য চিকিৎসা সেবা এবং বিভিন্ন প্রকার টেস্ট অত্যন্ত সল্প খরচে করা হয়্। দরিদ্র রোগীদের জন্য যেকোন চিকিৎসা এবং টেস্ট বিনা মূল্যে করা হয়ে থাকে।
চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি হোপ ট্রেনিং সেন্টারে ইউকেএইড এর অর্থায়নে এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায় ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারী প্রশিক্ষণ চলছে।
তিন বছর মেয়াদি এই প্রশিক্ষণে বৃহত্তর চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের মেয়েরা অংশ নিচ্ছে। প্রথম ব্যাচের ৩০ জন মেয়ে ইতিমধ্যে গ্রাজুয়েশন অর্জন করেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যাচের ৫০ জন মেয়ে বর্তমানে প্রশিক্ষণরত আছে। হোপ ফাউন্ডেশন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রবিবার ১০ এপ্রিল সকাল ১১ টায় রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়িতে অবস্থিত হোপ ফাউন্ডেশনের পরিচালনাধীন মা ও শিশু হাসপাতালের সভা কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় হোপ ফাউন্ডেশনের চীফ অপারেটিং অফিসার কমান্ডার এসএম ফেরদৌসুজ্জামান (অব:), হোপ হসপিটালের পরিচালক ডা: সোয়েব আহমেদ, ছৈয়দ করিম, পিসিসি এবং ইমরানুল হক, কো-অর্ডিনেটর উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরুতে চীফ অপারেটিং অফিসার হোপ ফাউন্ডেশন এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, ১৯৯৯ সালে কক্সবাজারের বাংলাবাজার এলাকায় মা ও শিশু হাসপাতাল নামে এই প্রতিষ্ঠান তার কার্যক্রম শুরু করে।
২০০৬ সালে দক্ষিণ মিঠাছড়ির চেইন্দা এলাকায় এর বর্তমান অবস্থানে একটি হাসপাতাল এবং ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করে। বর্তমানে হোপ হাসপাতাল একটি ৪০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। এ হাসপাতালে বর্তমানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, দক্ষ নার্স এবং মিডওয়াইফ সহ প্রায় ৭০ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী কর্মরত আছেন।
হোপ হসপিটালের পাশে হোপ ফাউন্ডেশনের নিজস্ব জমিতে ৭৫ শয্যা বিশিষ্ট হোপ মেটারনিটি এন্ড ফিস্টুলা সেন্টারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হলে এ সেন্টারটি মাতৃসেবা এবং ফিস্টুলা রোগের চিকিৎসায় অনন্য সাধারণ ভুমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।
এই ধরনের সেন্টার শুধু অত্র অঞ্চলেই নয় সমগ্র বাংলাদেশে একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা যায়।
মত বিনিময় অনুষ্ঠানে কক্সবাজার ও রামু উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।