বাংলাদেশের পাহাড়িদের ‘আদিবাসী’ না বলার বিষয়টিকে একটি ‘রাজনৈতিক বিতর্ক’ হিসেবে চিহ্নিত করে মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির বলেছেন, ‘পাহাড়ের সম্পদের নিয়ন্ত্রণই’ এ বিতর্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্য।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আদিবাসী শব্দটাকে অস্বীকার করা একটি রাজনৈতিক বিষয়, অন্য কিছু না। আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসী শব্দটি আছে। আদিবাসীদের জন্য কী কী করা হবে- সেটাও আছে। ক্ষমতায় এসে ‘আদিবাসী নাই’ বলা তার সঙ্গে মিলছে না।”
দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে এই ‘রাজনৈতিক বিতর্কের’ উদ্ভব বলে খুশী কবির মত।
“একটি হচ্ছে- ওখানকার সম্পদ যেটা আছে সেটার নিয়ন্ত্রণ। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ওখানে যাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, অর্থাৎ আমাদের সেনাবাহিনী।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় মানবাধিকার কর্মী প্রিসিলা রাজের লেখা ‘চাকমা জাতির ইতিহাস বিচার এবং অশোক কুমার দেওয়ান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ‘নিজেরা করি’র প্রধান খুশী কবির।
প্রিসিলার বইয়ে অশোক কুমার দেওয়ানের লেখা ‘চাকমা জাতির ইতিহাস’ বইকে বর্তমান সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কোনো দেশ তখনই সমৃদ্ধ হয় যখন বহু জাতি, সংস্কৃতি ও চিন্তা চর্চার সুযোগ থাকে।
এ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানের একজন বক্তার কথা থেকে উদ্ধৃত করে খুশী কবির বলেন, “আমরা এখন জাতি বলতে শুধু বাঙালি না, বাঙালি মুসলমানকে প্রাধান্য দিচ্ছি। আদিবাসী, হিন্দু, খ্রিস্টান বা অন্য সব জাতিগোষ্ঠীকে প্রান্তে ফেলেছি।”
রাষ্ট্রের সীমানা পরিবর্তন হলেও ‘কে কোথা থেকে এল’- সেই আলোচনা হওয়া ‘উচিত নয়’ বলে মনে করেন এই মানবাধিকার নেত্রী। তার মতে, আলোচনা হওয়া উচিৎ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে।
“পার্বত্য চট্টগ্রামে আধিপত্য ছিল আদিবাসীদের। সেখানে যে ১১টি কিংবা ১৩টি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে আলাদা স্বত্ত্বা ও ভাষা আছে, সেখানে তাদের মধ্যে কী মিল-অমিল… তার চেয়ে উৎপাদন ব্যবস্থা ও দখলের অধিকার তাদের প্রয়োজন।”
সভাপতির বক্তব্যে কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, “অশোক কুমার দেওয়ান আদিবাসী হিসেবে তার জাতির ইতিহাস তথ্যসমৃদ্ধ ও ইতিহাসের সক্রিয় বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তুলে ধরেছেন। এর উপর ভিত্তি করে লেখা প্রিসিলার বইয়ে চাকমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও নৃতাত্ত্বিকসহ সব বিষয়ই অল্প অল্প করে আছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, সেনাবাহিনীর যে ‘ডিসকোর্স’, তাতে চাকমারা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে তিন থেকে চারশ বছর আগে এসেছে বলে উল্লেখ করা হয়। অশোক কুমার দেওয়ান উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছেন, মোঘল আমলের আগে থেকেই সেখানে তাদের অবস্থান ছিল।
“পর্তুগিজ লেখক বারোস ১৫৫২ সালে এই অঞ্চলের ইতিহাস নিয়ে যে বেই প্রকাশ করেন, তার চতুর্থ খণ্ডে এক মানচিত্রে চাকমা নামে এক রাজ্য ছিল। তার মানে তখন এটা অনেক প্রভাবশালী এলাকা ছিল।”
মোঘলরা যুদ্ধে চাকমাদের পরাজিত করতে পারেনি- এমন ইতিহাসও রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো জাতি লিখিত ইতিহাসে কখন এল, তার উপর তার বসতি নির্ভর করে না। ইতিহাসে আসা মানে হচ্ছে, এর অনেক আগ থেকে তাদের অবস্থান সেখানে ছিল।”
অন্যদের মধ্যে নৃবিজ্ঞানী প্রশান্ত ত্রিপুরা, সাংবাদিক সোহরাব হোসেন, উন্নয়ন সংগঠক তন্দ্রা চাকমা ও অ্যাডভোকেট প্রতিকার চাকমা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
[বিডিনিউজ]