আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। কদিন পরেই রামু উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২৮ মে প্রথম দফায় গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, ঈদগড়, কাউয়ারকোপ, রশিদনগর এই পাঁচ ইউনিয়নে নির্বাচন হবে। ৪ জুন দ্বিতীয় দফায় ফতেঁখারকুল, চাকমারকুল, রাজারকুল, খুনিয়াপালং, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ও জোয়ারিয়ানালা এই ছয় ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রার্থীদের প্রচারনা অভিযান এখন তুঙ্গে। অনেকটা প্রচারনা উৎসব চলছে। বাকি রইল ভোট উৎসব। উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, আতংক এবং শংকা আছে বলে মনে করেন সাধারণ ভোটাররা। ভোট উংসব না সহিংসতা অপেক্ষা করছে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।
ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত দেশের অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সমূহে সহিংসতা এবং সংঘর্ষ এড়ানো যায়নি। সংবাদ আর গণ মাধ্যমের বদৌলতে দেশের ভোটাররা তা দেখেছেন। এজন্য তাদের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা থাকতেই পারে। অবশ্য স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং প্রশাসন বলছেন উদ্বেগ, উৎকন্ঠার কারণ নেই। ভোট যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সেদিকে তারা পুরোপুরি সতর্ক আছেন। ইতিপূর্বের নির্বাচন সমূহেও ঠিক একই কথা বলা হয়েছিল।
রামু উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চিত্রটা বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। রামুর এই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এগার ইউনিয়নে মোট ৫০ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন।
দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি থেকে মনোয়ন পেয়েছেন ২২ জন, ন্যাপ থেকে ১ জন এবং বাকিরা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি।বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীর চেয়ে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি।
কোন কোন ইউনিয়নে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই কিন্তু আওয়ামীলীগের আছে। এর কারণ ও আছে। রামু উপজেলার আওয়ামীলীগ দীর্ঘ দিন ধরে বিভক্ত। রামুতে বিএনপির মধ্যেও আন্ত:কোন্দল আছে। তফাৎ হল রামুতে আওয়ামীলগের আন্ত:কোন্দল চরম পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে। কিছু কিছু ইউনিয়নে বিএনপি ঐক্যমতে পৌছতে পারলেও আওয়ামীলীগ তা করতে পারেননি। বিএনপির প্রার্থীরা এদিক দিয়ে বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন। এগার ইউনিয়নের প্রত্যেকটিতে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে। কোন কোন ইউনিয়নে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে।
জেলা আওয়ামীলীগ কিংবা কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ এসকল স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দমন করতে পারেননি। অবশ্য এটাও টিক যে, কয়েকটি ইউনিয়নে দলীয় প্রতীক পাওয়া প্রার্থীর চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে এগিয়ে আছেন। তারা নির্বাচনে জয়ী হয়ে যেতেও পারেন। তবে নিজেদের মধ্যে যেহেতু প্রতিদ্বন্ধীতা হচ্ছে তাই ভোট ভাগাভাগি হবে।
এ সুযোগকে কাজে লাগাবেন বিএনপির প্রার্থীরা। গণসংযোগ এবং পথ সভাগুলোতে ভোট প্রার্থনার চেয়ে একে অপরের বদনাম এবং রটনা নিয়েই বেশি প্রচারনা চালাচ্ছেন। কেন্দ্রের নির্দেশ থাকলেও একপক্ষের প্রার্থীকে অপর পক্ষ মেনে নিতে না পারায় প্রত্যেকটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এজন্য রামুতে এবার আওয়ামীলীগের ভরাডুবির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না।
রামুতে আওয়ামীলীগের আন্ত:কোন্দলের কারণে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বিব্রত এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। তাই সমাধান হিসেবে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়াকে অনেকে উপযুক্ত সমাধান বলে ধরে নিতে পারেন। ভোটাররা এখন প্রার্থী, ব্যক্তি এবং দলীয় প্রতীক সব কিছু বিবেচনা করে ভোট দিতে চান। সেক্ষেত্রে কিছু কিছু ইউনিয়নে প্রার্থী এবং ব্যক্তি বিবেচনায় ভোট দিলে সংখ্যালঘুদের ভোট বিএনপি ও পাবে। এলাকার উন্নয়ন শান্তি এবং ব্যক্তি বিবেচনা করে ভোট দেওয়া কিংবা প্রতীক দেখে ভোট দেওয়ার মত জটিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ভার আপাতত ভোটারদের উপর থাকল।
রামুর বেশিরভাগ ইউনিয়নে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু-বৌদ্ধদের ভোট আছে। এগার ইউনিয়নের কোন কোন ইউনিয়নে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভোট ছাড়া জয়ী হওয়া যায়না কিংবা যে প্রার্থী সংখ্যালঘুদের এক তরফা ভোট পান সে প্রার্থীই জয়ী হন।
তাই ভোট আসলে সংখ্যালঘুপ্রীতিও চোখে পড়ার মত পর্যায়ে চলে আসে। এই হিসাবটা এখন সংখ্যালঘুরাও বুঝেন। তাই তারা ভোট কেন্দ্রে এবং ভোট পরবর্তী নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট বিচলিত। দুঃখজনক হল, কতিপয় প্রার্থীরা ২০১২ সালের রামু সহিংসতার কথা সহ অতীতে সংখ্যালঘুদের উপর চলা সহিংসতার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে এতটুকু লজ্জা এবং সংকোচ বোধ করছেন না।
বিভিন্ন কারণে এবারের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোটারদের উপস্থিতি কম হতে পারে।
নির্বাচন এলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে কিছু সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তি মাঠে নেমে পড়ে। প্রার্থীরাও সুযোগ বুঝে এসব চাটুকারদের ভাড়ায় ব্যবহার করেন। ভোটারদের তাদের নিরাপত্তার আশংকার পাশাপাশি বেশি সজাগ থাকতে হবে এসব সুযোগ সন্ধানীদের বিষয়ে।
ভোটের আগের রাতে টাকা বিলিবন্টন এবং ঘরে ঘরে গিয়ে গভীর রাতে ভয় ভীতি দর্শানোর বিষয়েও সতর্ক থাকার একটা ব্যাপার আছে।
নির্বাচনের আগে, নির্বাচন চলাকালীন সময়ে এবং নির্বাচন পরবর্তী যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।
সংবাদ এবং গণমাধ্যম কর্মীদের দায়িত্ব পালনের যথাযথ সুযোগ করে দিতে হবে। অতীতে রামুতে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকরা হামলার শিকার হয়েছিলেন।