জিম্মি সঙ্কট মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নিতে সরকার ‘বিলম্ব করেছে’ অভিযোগ করে বিএনপি বলেছে, গুলশানের ক্যাফের দ্রুত অভিযান চালালে অনেকেই বেঁচে যেত ‘জনগণ মনে করে’।খবর বিডিনিউজের।
বুধবার দুপুরে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, “শুক্রবার রাতভর গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় বিদেশি নাগরিকসহ দেশের মানুষ জিম্মি হওয়ার ঘটনা মোকাবিলা করতে সরকারি সিদ্ধান্তের দোদুল্যমানতার কারণে দীর্ঘসূত্রতায় এতোগুলো মানুষের প্রাণ ঝরে গেলে বলে এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে।
“জনগণ এও মনে করে, খুব দ্রুত দেশের নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালালে হয়তো অনেক জীবন রক্ষা পেত।”
শুক্রবার রাতে গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে একদল অস্ত্রধারী ঢুকে দেশি-বিদেশি অন্তত ৩৩ জন অতিথিকে জিম্মি করে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযানে ওই ক্যাফের নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্র বাহিনী। সেখান থেকে ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পাওয়া যায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনের মৃতদেহ, যাদের সবাইকে জবাই করা হয়।
উদ্ধার অভিযানের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সমালোচনাও সংবাদ সম্মেলনে করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।
“গোটা জাতি যখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রুদ্ধশ্বাসে জিম্মি ঘটনা অবলোকন করছে, যখন এতোজন দেশি-বিদেশি মানুষের প্রাণহানিতে দেশ-বিদেশে আহজারি উঠেছে, দেশ-বিদেশের মানুষ যখন এই মর্মন্তুদ ঘটনায় শোকাচ্ছন্ন।
“ঠিক সেই মুহূর্তে শনিবার সকালে সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় অভিযান পরিচালনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী ঘটা করে চার লেইনের সড়ক উদ্বোধন না করলেই পারতেন।”
গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রোববার দল-মত নির্বিশেষে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্য গড়তে হলে খালেদা জিয়াকে ক্ষমা চাইতে হবে ও জামায়াত ছাড়তে হবে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনাও করেন রিজভী।
“আমরা বলতে চাই, শর্ত দিয়ে জাতীয় ঐক্য হয় না। কারণ কারা কী ঘটাচ্ছে, না ঘটাচ্ছে, এই অশুভ শক্তির তৎপরতা বন্ধ করতে হলে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। শর্ত দেওয়ার কথা-বার্তা বলে আসলে বিভাজনটাকেই তারা (ক্ষমতাসীন দল) রক্ষা করছে, তারা বিভেদের পথেই হাটছে।”
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বাড়ার অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “ক্রসফায়ার নিয়ে নানা সংগঠনের প্রতিবাদের পরও এই হত্যাকাণ্ড বেড়েই চলেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনায় হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন অভিযুক্তদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হচ্ছে।”
“বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহিভূত হত্যাই যদি রাষ্ট্রের বিধানে পরিণত হয়, তাহলে বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসনের প্রয়োজন কী? রাষ্ট্র কর্তৃক এই ধরনের বেআইন কর্মকাণ্ডে অপরাধ দমে না বরং অপরাধ নানাভাবে নানা মাত্রায় নানা গলিপথে এটি তার বিষদাঁত নিয়ে এগিয়ে আসে এবং ছোবল মারতে শুরু করে,” যোগ করেন রিজভী।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, হারুনুর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।