পাহাড়ি বন, সমতল ভূমির শালবন এবং উপকূলীয় প্রতিবেশ ও প্লাবন ভূমির বন এলাকা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ‘টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের মাধ্যমে। টেকসই বন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের রক্ষিত এলাকাসহ অবক্ষয়িত ও বৃক্ষশূণ্য বন পূনরুদ্ধার ও জীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং প্রতিবেশ পরিষেবা, জীবিকায়ন সুবিধা, কার্বন আবদ্ধকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীলতা বৃদ্ধিসহ নির্বাচিত বনাঞ্চলের রক্ষিত এলাকাগুলোর নেটওয়ার্ক উন্নয়নের লক্ষে কাজ করছে ‘সুফল’ প্রকল্প।
বন সংরক্ষণ কেন্দ্রিক বিকল্প আয়বর্ধক কাজের সুযোগ সৃষ্টি এবং বাজার ভিত্তিক ভ্যালু চেইন উন্নয়নের মাধ্যমে বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর হতদরিদ্র ও ঝুঁকিগ্রস্থ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নির্দিষ্ট জনগণের বিকল্প জীবিকার বিকাশ সাধনের সংস্থান রয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় গতকাল সোমবার (১৩ মার্চ) সকাল ১১টায় জীবিকা উন্নয়ন তহবিলের চেক বিতরণ করেছেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এম.পি। এ সময় তিনি রামু উপজেলার রাজারকুল রেঞ্জের অধীনস্থ বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর হতদরিদ্র ও ঝুঁকিগ্রস্থ ৬৩৭ জনকে চেকের মাধ্যমে জীবিকা উন্নয়ন তহবিলের ১ কোটি ৬০ লক্ষ ৫২ হাজার ৭০০ টাকা বিতরণ করেন।
এর আগে উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এম.পি, সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী সহ পরিবেশ, বন বিভাগ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা রামু রাজারকুলস্থ কক্সবাজার বোটানিক্যাল গার্ডেনে মুজিব শতবর্ষে ১০০ একর বনায়নের লক্ষে সৃজিত ১০০ প্রজাতি বৃক্ষচারার নার্সারি পরিদর্শন করেন।
কক্সবাজার বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় অনুষ্ঠিত চেক বিতরণ অনু্ষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এম.পি বলেন, গাছ লাগানোর ফলে এলাকার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে, শুধুতা নয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকরে বলেই, আমরা আমাদের সুস্থজীবন নিয়ে এখনও বেঁচে আছি। যে দিন গাছের সংখ্যা কমে যাবে, সে দিন আমাদেরও আয়ুষ্কাল কমে আসবে। দূর্বৃত্তায়নে বন ধ্বংস হলে, ২০/৩০ বছর পরেও আমরা ইচ্ছে করলে বন সৃষ্টি করতে পারি। কিন্তু পাহাড় কর্তন করলে সেটাকে সৃষ্টি করা যায় না। সেটা কখনও সম্ভব নয়। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় লোক এ ব্যাপারের কঠোর না হলে, পাহাড় কর্তনরোধ করা সম্ভব না।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, কক্সবাজার-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মুনিরা সুলতানা, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তাপ্তি চাকমা, সুফল প্রকল্প’ উপ প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আব্রাহাম হোসেন, নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুর রব মোল্লা, রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান প্রমুখ।
সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, বন ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে এবং বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টি ও বাজার ভিত্তিক মূল্যমান উন্নয়নের মাধ্যমে বন নির্ভর মানুষের কর্মসংস্থান করার পরিকল্পনা নিয়েছে বর্তমান সরকার। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বন নির্ভর ও বন এলাকায় বসবাসকারীদের বিকল্প আয়ের কাজের জন্য জীবিকা উন্নয়ন তহবিল দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেয়া এই টাকা সঠিকভাবে কাজে লাগাবেন। নিজের এবং পরিবারের উন্নয়নের জন্য। পাশাপাশি বন সংরক্ষণে বন বিভাগকে সহযোগিতা করবেন।

এমপি কমল বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে রামুতে ১০০ হেক্টর জমিতে ১০০ প্রজাতির চারা রোপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রামুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে অন্তর্ভূত হবে এ বন। তিনি বলেন, রাজারকুলের এই অঞ্চলে বোটানিক্যাল গার্ডেন সৃষ্টি করার আগে এখানে গাছ ছিলো না। গাছ বিহীন এই জায়গায় দাঁড়িয়ে সুদূর মায়ানমার পর্যন্ত দেখা যেতো। এই কয়েক বছরে বোটানিক্যাল গার্ডেনে সবুজ গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে এই গাছ গুলো রোপন করা হয়েছে। বন রক্ষা করতে হবে, বন অক্সিজেন দেয়, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে জনতা জেনেছে। এটিই তার সফলতা।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাসের সভাপতিত্বে ও কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক প্রান্তোষ কুমার রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তা করেন, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আয়োজনে ও নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) কক্সবাজারের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর হতদরিদ্র ও ঝুঁকিগ্রস্থ সুফলভোগী মো. আইয়ুব হোসেন, বেলাল আহমদ, সেনোয়ারা বেগম, আমির হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কোরআন তেলাওয়াত করেন, মাওলানা নুরুল আলম।