রামুতে উদ্বোধন হলো করা হলো হোপ হসপিটাল মেটারনিটি ও ফিস্টুলা সেন্টার। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি মঙ্গলবার (৩০ মে) বিকাল ৫টায় রামুর চেইন্দায় এটি উদ্বোধন করেন। স্বাস্থ্যসেবা খাতের কক্সবাজার জেলায় বিনিয়োগ করে মানবিক সেবায় কাজ করছে হোপ ফাউন্ডেশন। এর ধারাবাহিকতায় উদ্বোধন করা হোপ মেটারনিটি এন্ড ফিস্টুলা সেন্টার। রামু উপজেলার চেইন্দা এলাকায় হোপ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘হোপ হসপিটাল মেটারনিটি ও ফিস্টুলা সেন্টার’ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশে সকল ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা সকলের জানা। করোনা মহামারির সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। যার কারণে আজ সমস্ত বিশ্ব বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো মডেল হিসেবে গণ্য করেছে। স্বাস্থ্যখাতে প্রতিটি পদক্ষেপ জাতির জন্য সুফল বয়ে আনছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইম্যান এন্ড চিলড্রেন অব বাংলাদেশ’ সম্পূর্ণ দান নির্ভরশীল একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের পরিশ্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম একটি অত্যাধুনিক ফিস্টুলা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে প্রশংসার।
তিনি বলেন, যেকোন দেশের উন্নয়ন শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগে সম্ভব নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সে প্রচেষ্টায় এক বিরাট ভূমিকা অবশ্যই রাখে। হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইম্যান এন্ড চিলড্রেন অব বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে চট্টগ্রাম ডিভিশন, নোয়াখালি, কুমিল্লা এবং ইদানিং বরিশালে তাদের কার্যক্রম চালু করে হাজারও মা ও শিশুদের সেবা দিয়ে আসছে। রোহিঙ্গা বাস্তহারা মানুষের পাশে থেকে ২৪ ঘন্টা ফিল্ড হাসপাতাল খোলা রেখে এই প্রতিষ্ঠান তাদের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হয়েছে।
আমি আশা করবো, হোপ ফিস্টুলা হাসপাতাল মা-বোনদের সর্বনাশা ফিস্টুলা অপারেশনের মাধ্যমে একদিন বাংলাদেশ ফিস্টুলা মুক্ত করতে সামর্থ হবে।
হোপ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা ডা. ইফতিখার উদ্দিন মাহমুদের স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, স্বাস্থ্য বিভাগের (হাসপাতাল অনুবিভাগ) অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খান, কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জেন ডা. মাহাবুবুর রহমান, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা।
স্বাগত বক্তব্যে হোপ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা ডা. ইফতিখার উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ১৯৯৯ সালে ছোট্ট একটি ভাড়া করা বাড়িতে মা ও শিশুদের সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী ও দাতা সংস্থার সাহায্য সহযোগিতায় ‘হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন এন্ড চিল্ড্রেন অব বাংলাদেশ’ যাত্রা শুরু করা হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে হোপ ফাউন্ডেশন ধাপে ধাপে স্বাস্থ্য সেবা দুর্গম জনপদের মা ও শিশুদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। হোপ ফাউন্ডেশন তাঁর সৃষ্টিশীলতা, দূরদর্শিতা এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করে ছোট্ট একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বর্তমানে স্থানে এসেছে। বর্তমানে হোপ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম কক্সবাজারের সীমানা পেরিয়ে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের ১৭ জেলায় বিস্তৃতি লাভ করেছে। আজ হোপ মেটার্নিটি ও ফিস্টুলা সেন্টার উদ্বোধনের মাধ্যমে আমাদের আরো একটি বিশাল স্বপ্নের যাত্রা শুরু হলো। এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে ফিস্টুলা মুক্ত দেশ হিসেবে দেখার স্বপ্ন দেখছি।
হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কে এম জাহিদুজ্জামানে সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উদ্বোধন অনুষ্ঠানের অতিথি মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরো’র মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শেখ মোঃ মনিরুজ্জামান, মেম্বার বোর্ড অব ডিরেক্টর্স ডা. সিরাজুল ইসলাম শিশির, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আককাস আলী সেখ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. রেয়াজুল হক, রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া, রামু প্রেসক্লাব সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া প্রমুখ।
জানা গেছে, ২০০৭ সালে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি হোপ বার্থ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২৪ বছরে হোপ ফাউন্ডেশনের সুনামের সাথে প্রতিষ্ঠা করেছে, ৪০ শয্যার হাসপাতাল, ৫০ শয্যার ফিল্ড হাসপাতাল, ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার, মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউট, ৯টি বার্থ সেন্টার, ২টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কয়েকটি যৌন ও প্রজনন কেন্দ্র এবং অনেকগুলো ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মাতৃ স্বাস্থ্যের মানসম্মত সেবার মাধ্যমে দেশের লক্ষ লক্ষ সুবিধা বঞ্চিত অসহায় মানুষের পাশে আছে।
হোপ ফাউন্ডেশন বর্তমানে প্রসবজনিত ফিস্টুলা, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেবা কার্যক্রম, নিরাপদ মাতৃত্ব কার্যক্রম, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য কার্যক্রম, জরুরী প্রসূতি ও নবজাতকের সেবা কার্যক্রম, লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা নিরসন কার্যক্রম, টেলিমেডিসিন কার্যক্রম, সার্ভিকাল ক্যান্সার স্ক্রীনিং কার্যক্রম, কভিড-১৯ কার্যক্রম, দুর্যোগকালীন জরুরী সেবা কার্যক্রম, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। পথশিশুদের খাদ্য কার্যক্রম, গবেষণা কার্যক্রম সহ মাধ্যমে দেশের লক্ষ লক্ষ অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।