কক্সবাজারে বাংলা চর্চা ও বাংলা সাহিত্য কর্মের অবস্থান নিয়ে কবি ও কবিতার আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কক্সবাজারে কবিদের এ আড্ডায় বর্তমান বিশ্বায়নে যুদ্ধের দামামা, মানবিকতার অবমূল্যায়ন বিষয়ে কথা হয়। আলোচনা হয় রাজনৈতিক, সামাজিক, মানবিক প্রেক্ষাপটে কবি, সাহিত্যিক, সংস্কৃতি কর্মীদের ভূমিকা নিয়ে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের অংশ কক্সবাজারও। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে বৃহত্তর চট্টগ্রামের কবি-সাহিত্যিকদের সাহসী ভূমিকা ও অবদানের কথা উঠে আসে এ আড্ডায়।
গত রবিবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার পৌরসভা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কবি ও কবিতার প্রাণবন্ত এ আড্ডায় মুখ্য আলোচক ছিলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত কবি আসাদ মান্নান, ভারতের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জীবনানন্দ দাশ গবেষক কবি মোস্তাক আহমেদ। কবিতা-গান, কথামালায় কবিদের এ আড্ডায় সভাপতিত্ব করেন, কবি আসিফ নূর ।
কবি আসাদ মান্নান বলেন, কক্সবাজারের কবি ও কবিতার সাথে আমার গভীর সম্পর্ক আছে। কক্সবাজার শুধু সমুদ্র শহর নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক শহর। জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্বে যেমন রয়েছেন, তেমনি স্থানীয় পর্যায়ে কক্সবাজারের কবি-সাহিত্যিকদের অবস্থান সমৃদ্ধ। কক্সবাজার সামুদ্রিক সম্পদ, পর্যটনে বিশ্ব নন্দিত। তেমনি কক্সবাজারের কবি-সাহিত্যিকরা শিল্প-সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তি চর্চায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এ চর্চা প্রজন্মের মাঝে বিরাজমান থাকতে হবে।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত কবি আসাদ মান্নান আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে ছোট কাগজ কেন্দ্রিক আড্ডা গুলো আমাদের কবিতার দুর্বলতা, আলোচনা সমালোচনার ভেতর দিয়ে কবিতা নির্মাণের প্রয়াস পেত। বর্তমান প্রযুক্তির সময়ে সৃষ্টিশীলতার আড্ডা কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘মুজিব একটি জাতির রূপকার’ চলচিত্র বঙ্গবন্ধুর মহাকাব্যিক জীবনের সফল চিত্রায়ণ। এটি সবার একবার হলেও দেখা দরকার।
বাংলাদেশের মানুষের আতিথিয়েতা মুগ্ধ ভারতের কবি মোস্তাক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আন্তরিকতা, ভালোবাসা সত্যিই বিরল। হঠাৎ করে মানুষকে আপন করে নেয়া, কাছাকাছি টেনে নেয়া। শুধু খাওয়া দিয়ে নয়, কথা দিয়ে হয়। সম্পর্ক দিয়ে হয়, হৃদ্ধতা দিয়ে হয়। সময় কাটালে বুঝা যায়, বাংলাদেশের মানুষ কত আন্তরিক। আমরা যখন ভারতবর্ষে ফিরে যায়, তখন এ গল্প গুলোই চলতে থাকে।
মাস্টারদা সূর্যসেন-প্রীতিলতাকে স্মরণ করে, বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষের বিপ্লবী চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোস্তাক আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বহু মানুষের সাথে দেখা হয়েছে। একের এক জায়গায় যাচ্ছি। প্রচুর মানুষের সাথে কথা বলেছি। কথা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কবিতা শুনেছি, কবিতা পড়েছি। এটা আমার জন্য বড় প্রাপ্তি। এই সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কক্সবাজারে বাংলা সাহিত্যের উর্বর ভূমি। কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল রয়েছে। আমাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক দেয়া নেয়া থাকবে।
কবি ও কবিতার এ আড্ডায় আলোচনা ও কবিতা পাঠে আরও অংশ নেন, কবি-প্রাবন্ধিক মজিদ মাহমুদ, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কবি ড. শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক, রামু সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) কবি দিলওয়ার চৌধুরী, কবি আদিল চৌধুরী, কবি আসিফ নূর, কবি-গবেষক আলম তৌহিদ, সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি নাট্যজন মো. খোরশেদ আলম, কবি-গল্পকার মানিক বৈরাগী, চিন্তন সম্পাদক কবি খালেদ শহীদ, জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন খেলাঘর আসর কক্সবাজার জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক কবি মীর্জা জসিম উদ্দিন, কবি-আবৃত্তি শিল্পী মাহমুদুল হাসান, সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মনির মোবারক, কবি-গবেষক কালাম আজাদ, কবি-সাংবাদিক সুব্রত আপন, কবি পলাশ দাশ, কবি মো. সাইফুল্লাহ মুনির প্রমুখ।