আহমদ গিয়াস:
কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগরস্থ ‘বানরের পাহাড়’ থেকে পালিয়েছে বানরের দল। বানরের খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ আবাস ধ্বংস হওয়ার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা স্থানীয়দের। এ কারণে পর্যটকরা বানরের পাহাড়ে গিয়ে বানরের দল না দেখেই ব্যর্থ মনোরথে ফিরছে। স্থানীয় পরিবেশবাদীরা ওই পাহাড়ে বানরের জন্য স্থায়ী অভয়ারণ্য গড়ে তোলার দাবি তুলেছেন।
স্থানীয়রা জানান, মাত্র দুই-তিন দশক আগেও কক্সবাজারের বিভিন্ন বনাঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে বন্য বানরের দল দেখা যেত। কিন্তু বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় আবাস ও খাদ্য সংকটে পড়ে বানরের সংখ্যা কমে গেছে বনে। তবে শহরতলীর দক্ষিণ কলাতলীস্থ দরিয়ানগরের ‘বানরের পাহাড়ে’ মাত্র ৩ মাস আগেও দেখা যেত বানরের ঝাঁক। ওইসময় এই পাহাড়ে বানরের কয়েকটি দল বাচ্চাও প্রসব করে। বানরের দলগুলো সকালে ও বিকালে বিচরণ করত পাহাড়ের ঢালে। ভক্ষণ করত লতা-গুল্ম। এসময় মানুষের সাথেও তামাশায় মেতে উঠত বানরের দল।
পর্যটকরা ছাড়াও স্থানীয়রা এই দৃশ্য উপভোগ করত। কিন্তু গত ৩ মাস ধরে বানরের দলের দেখা মিলছে না। তবে কী কারণে বানরের দলগুলো ওই পাহাড় ছেড়ে পালিয়েছে তা স্থানীয়দের কাছে অজানা।
অনেকের মতে, সম্প্রতি বানরের পাহাড়ে বানরের খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ আবাস ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বানরের দল অজ্ঞাতস্থানে চলে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বানরের পাহাড়ের এক পাশে চলছে জবর দখল বাণিজ্য। এক শ্রেণীর ভূমিগ্রাসী বনকর্মী ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে সম্প্রতি বানরের পাহাড়ে গড়ে তুলেছে একাধিক ঝুপড়ি ঘর। তারা পাহাড়টিকে প্লট আকারে বিভক্ত করে বেচা-বিক্রি করে দিচ্ছে প্রভাবশালীদের কাছে। আর প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসীরা সেখানে মিয়ানমার নাগরিকদের বসতি গড়ে তুলছে। এ কারণে বানরের দল নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে পাহাড় ছেড়ে পালিয়েছে।
এছাড়া পাহাড়টি একসময় গভীর বনাঞ্চলের সাথে সংযুক্ত থাকলেও জবর দখলবাজদের কারণে সেই সংযোগ নষ্ট হয়ে গেছে। এই ঘটনায় বনবিভাগকে দূষছে স্থানীয়রা।
জানা যায়, কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে সমুদ্র তীরবর্তী মেরিন ড্রাইভ ধরে দক্ষিণে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ গেলেই রাস্তার পূর্ব পাশে দেখা যায় এই ‘বানরের পাহাড়’। দরিয়ানগর পর্যটন কেন্দ্রের আগে বড়ছড়া খালের উত্তর পাশ থেকে শুকনাছড়ি পর্যন্ত প্রায় ১০ একর এলাকা জুড়ে এই পাহাড়টির অবস্থান। এই পাহাড়ে রয়েছে ঘন বাঁশ বন ও সেগুন বাগান ছাড়াও নানা প্রজাতির বৃক্ষ ও গুল্মের সমাহার। এরই মাঝে বাস করত বানরের কয়েকটি দল। এই পাহাড়ের ঢালুতে শালিক, বাতাসিসহ আরো কয়েকটি বিরল প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ছিল। বর্তমানে পাখির দলের বিচরণ থাকলেও বানরের দলের দেখা মিলছে না। অথচ বানরের দল দেখতে প্রতিদিন স্থানীয়রা ছাড়াও পর্যটকরা ভীড় জমাত বানরের পাহাড়ের পাশে। বিশেষ করে শিশুদের কাছে বানরের দলের ক্রীড়াশৈলী ছিল বেশ আনন্দময়।
স্থানীয়রা এই পাহাড়কে ঘিরে নতুন একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ার দাবি তুলে আসছিল। কিন্তু কোন দাবিরই তোয়াক্কা না করে এখন বানরের পাহাড়ে চলছে জবর দখলবাজি।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টোয়াক বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান আমাদের রামু কে জানান, জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এই বানরের পাহাড়টি পর্যটনের উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করা উচিৎ। তাহলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।